কি ঘটবে ২০১২ সালে? মায়ান ক্যালেন্ডার কি পারে সত্যি ভবিষ্যতবাণী করতে?



মায়ান পঞ্জিকার পরিচয়
মায়ান সভ্যতার নাম কম-বেশি আমরা প্রত্যেকেই শুনেছি। পুরাতন সেই মায়ান সভ্যতা মায়ানদের এক অনুপম সৃষ্টি। সময় এবং সৃষ্টির এক সুন্দর বিন্যাস সম্পর্কে তারা অনেক আগেই অবগত হয়েছিলেন। মায়ানরা জানত যে চাঁদ, শুক্র এবং অন্যান্য গ্রহ-তারা মহাবিশ্বে চক্রাকারে ঘুরছে। তারা নিখুঁভাবে সময় গণনা করতে পারত। তাদের একটি পঞ্জিকা ছিল যাতে সৌর বছরের প্রতিটি মিনিটের নিখুঁত বর্ণনা ছিল। মায়ান ক্যালেন্ডার সম্পর্কে উইকিপিডিয়ার পেজটা দেখতে চাইলে এখানে ঢুঁ মারুন।




মায়ানরা মনে করত প্রতিটি জিনিসের উপর সময়ের প্রভাব আছে এবং প্রতিটি জিনিস সময় অনূযায়ী একেকটি অবস্থানে অবস্থান করছে। পুরোহিতরা নভোঃমন্ডল এবং পঞ্জিকা ব্যাখ্যা করতে পারত। এ কারণে সাধারণ মানুষের সমস্ত কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা তাঁর হাতে থাকত। কখন বীজ রোপণ করতে হবে, কখন ফসল ঘরে তুলতে হবে, কবে থেকে বর্ষা শুরু হবে, কবে থেকে গরম শুরু হবে- এ সব সম্পর্কে তারা জানত বলে তারা ক্ষমতা এবং নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছে গিয়েছিল। তাদের সময়, ঋতু, চক্র উপলব্ধি করার খুব উচ্চ ক্ষমতা ছিল।

মায়ানদের কাছে মহাকাশের উপর ১৭ টি ভিন্ন ভিন্ন পঞ্জিকা ছিল। এদের মধ্যে কোন কোন পঞ্জিকা এখান থেকে ১০ মিলিয়ন বছর আগের। এবং সেগুলো এত দুর্বোধ্য যে তা বুঝতে চাইলে হিসেব-নিকেশ করার জন্য সাথে অবশ্যই একজন করে অ্যাস্ট্রোনমার, অ্যাস্ট্রোলজার, জিওলজিস্ট, এবং ম্যাথমেটিশিয়ান থাকতে হবে। শুক্র গ্রহের পরিক্রমণ পথ এবং এর অরবিট সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বানী করা একটি সারণীও তারা তৈরি করেছিল।

যে পঞ্জিকাগুলো পৃথিবী এবং পৃথিবীতে বসবাসরত প্রাণীদের জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো হল হা’ব, তুন-উক এবং তযোকি’ন। এদের মধ্যে তযোকিইন হল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রভাব আমাদের উপর অনেক বেশি।

হা’ব
এটি পৃথিবীর পরিক্রমণ পথের উপর রচিত। এতে সর্বমোট ৩৬৫ দিনের হিসাব আছে। হাব এ ২০ দিন করে মোট ১৮ মাসের উল্লেখ আছে (এত গেল মোট ৩৬০ দিন)। আর বাকি ৫ দিন নিয়ে আরেকটি মাস হিসাব করা হয়েছে যার নাম উয়ৈব। প্রতিটি মাসের নিজস্ব একটি করে নাম আছে। প্রতিটি দিনের আবার ধর্মীয় তাৎপর্য আছে।

তুন-উক

এটা হচ্ছে চাঁদের পঞ্জিকা। এতে চক্রটি হিসাব করা হয়েছে ২৮ দিন দিয়ে যাতে মেয়েদের রজঃচক্রের হিসেবের প্রতিফলন দেখা যায়। এই চক্রানুসারে প্রতি ৭ দিন পরপর আরও চারটি করে ছোট ছোট চক্র সম্পন্ন হয়। এই ছোট চক্রগুলো হল চাঁদের চারটি দশা।

তযোকি’ন

এটি মায়নাদের একটি পবিত্র পঞ্জিকা। এতে কৃত্তিকার পরিক্রমণ পথানুসারে চক্র পূরণ করা হয়েছে। এ চক্রানুসারে সম্পূর্ণ অরবিট ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ২৬,০০০ বছর। আর এই পঞ্জিকাতে ২৬০ দিনে একেকটি বছর পূর্ণ করা হয়েছে। এতে মায়ানদের দুটি পবিত্র নম্বরের বিন্যাস ঘটেছে। একটি ১৩ এবং অন্যটি ২০। এতে চারটি ছোট ছোট চক্র আছে যাদের বলা হয় সিজন বা ঋতু। প্রতিটি ঋতু ৬৫ দিনের। এদের নামগুরো হল চিকচ্যান, ওক, মেন এবং আহাউ। এই পবিত্র পঞ্জিকাটি এখনও মায়ান আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত আছে।

তযোকি’ন পঞ্জিকাটি হা’ব পঞ্জিকার সাতে সম্পর্কযুক্ত। হা’ব পঞ্জিকাটিতে ৫ দিনের সমন্বয়ে যে মাসটি রয়েছে সেটিকে খুব ভয়ঙ্কর একটি সময় বলে গণনা করা হয়। তযোকি’ন এবং হা’ব পঞ্জিকা দিয়ে একটি পূর্ণ চক্র সম্পন্ন করতে সময় লাগে ৫২ বছর। অধিকাংশ আর্কিওলজিস্টরা মনে করেন মায়ানরা খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩,১১৪ বছর আগে থেকে সময় গণনা করা শুরু করেছে। আমাদের বর্তমান পঞ্জিকা মতে খ্রিস্টের জন্মের বছরের জানুয়ারি মাস থেকে প্রথম বছর গণনা করা হয়। আর মায়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এই বছরটাকে হিসাব করা হয় শূন্য বছর। এই সময়টাকে লেখা হয় এভাবেঃ ০-০-০-০-০। একটা নতুন চক্র শুরু হওয়ার আগে ১৩ চক্রের ৩৯৪ বছর শেষ হয়ে যাবে। আর নতুন চক্রটি শুরু হবে ২০১২ সালে।

মায়ান পঞ্জিকার সাধারণ বিষয়সমূহ
মায়ানরা তিনটি ভিন্ন সিস্টেমের পঞ্জিকা ব্যবহার করত। এই তিনটি সিস্টেম তযোকিন ( পবিত্র পঞ্জিকা), হা’ব ( বিভিন্ন কাজকর্মের নিয়ম সংক্রান্ত পঞ্জিকা ), গণনার পন্থা।
তযোকি’ন ২৬০ দিনের চক্র এবং হা’ব ৩৬০ দিনের চক্র। তযোকি’ন এবং হা’ব একত্রে ১৮.৯৮০ দিনের একটি চক্র পূরণ করে। এই চক্রটি ‘রাউন্ড ক্যালেন্ডার’ নামে পরিচিত। ৫২ সৌর বর্ষের তুলনায় ১৮,৯৮০ দিন খুবই কম।
‘রাউন্ড ক্যালেন্ডার’ দেখতে অনেকটা চাকার মত। এর ভিতরে দুটি বড় ছোট বৃত্ত থাকে। ছোট বৃত্তটি ২৬০ দিন চক্রের তযোকি’ন বা পবিত্র রাউন্ড এবং বড়টি ৩৬৫ দিনের চক্রের হা’ব রাউন্ড। এভাবে গণনা করা চক্রে ৫২ বছরের মধ্যে একটি দিনও রিপিট হয় না। এ কারণে কয়েকশ বছরের মধ্যে মায়ারা তযোকি’ন বা হা’ব ডেট অনুযায়ী কোন একটি বিশেষ দিনকে ব্যবহার করতে পারত না। মায়ানরা এ সমস্যার সমাধান করেছিল ভিইেসমাল সিস্টেম অনুযায়ী। ভিজেসিমাল সিস্টেম হল এক ধরণের গণনা পদ্ধতি যাতে ২০ ভিত্তি করে গণনা করা হয়। মঅয়ারা কোন বস্তু গণনা করার ক্ষেত্রে ও এই পদ্ধতি ব্যবহার করত। তবে এ পদ্ধতির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হত সময় গণনার ক্ষেত্রে।
আমরা যেমন একেকটা বিশেষ সময়কে একেক নামে সূচীত করি মায়ানরাও তাই করত। যেমন তারা এক দিনকে বলত কিন, ২০ কিন তৈরি করত এক উইনাল, ১৮ উইনালে এক তুন, ২০ তুনে এক কাতুন, ২০ কাতুনে এক বাকতুন। অর্থাৎ-
১ কিন = ১ দিন
১ উইনাল = ২০ কিন = ২০ দিন
১ তুন = ১৮ উইনাল = ৩৬০ দিন
১ কাতুন = ২০ তুন = ৭,২০০ দিন
১ বাকতুন = ২০ কাতুন = ১৪৪,০০০ দিন

তাদের তারিখ লেখার পদ্ধতিটা ছিল নিম্নরূপ-
বাকতুন . কাতুন . তুন . উইনাল . কিন
উদাহরণস্বরূপঃ
৯.১৫.৯.০.১ বলতে ৯ বাকতুন, ১৫ কাতুন, ৯ তুন, কোন উইনাল নেই, ১ কিন বোঝায়।
অর্থাৎ ৯ X ১৪৪,০০০ + ১৫ X ৭,২০০ + ৯ X ৩৬০ + ০ X ২০ + ১ X ১ = ১,৪০৭,২০১ দিন।
আর মায়ানদের ০.০.০.০.০ বলতে খ্রিস্টের জন্মের পূর্বের ৩১১৩ সালকে বোঝায়।
আর ১৩.০.০.০.০ বলতে ২০১২ সালকে বোঝায়।

২০১২ সাল নিয়ে যত কথা
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বরের পর থেকে মায়া পঞ্জিকাতে আর কোন দিনের উল্লেখ নেই। তাই এই দিনটিকে মনে করা হচ্ছে পৃথিবীর সর্বশেষ দিন। আর একটি ব্যাপার হল আজ পর্যন্ত মায়া পঞ্জিকাতে যাই ভবিষ্যদ্বানী করা হয়েছে, সেই প্রতিটি কথা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়েছে। তাই বিজ্ঞানীরা ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বরে পর থেকে আসলে কি ঘটতে পারে তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।

হলিউডে ‘২০১২’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে যার মূল বিষয়বস্তু হল মায়াতে উল্লেখ করা ভবিষ্যদ্বানী। এই ছবিটি মুক্তি পাওয়ার আগে গুয়াতেমারা শহরে মায়ান পঞ্জিকা রাখে এমন একজনের ইন্টারভিউ নেয়া হয়েছিলো। তাঁর মতে ঐ দিনের পর থেকে পৃথিবী দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে।
আরেকজন বলেছেন, এটা দিয়ে মূলত বোঝায় যে, আমরা ব্যালান্সের বাইরে চলে গেছি। আমরা যা ডিজার্ভ করি, তার অনেক উর্ধ্বে চলে গেছি। তাই ওখানে আর কোন লিখিত হিসাব রাখা হয়নি বা রাখা সম্ভব হয়নি।
কেউ কেউ বলছেন এই দিন খুব বড় কোন দুর্যোগ ঘটতে পারে। আবার কেউ বলছেন এই দিনটি হবে মানব সভ্যতার শেষ দিন। প্রকৃত পক্ষে কি ঘটতে চলেছে ২০১২ সালে?

মায়ান পঞ্জিকার রহস্য
অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতায় একটি কথার উল্লেখ পাওয়া যায়। তাদের ধারণা অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন কেউ একজন দূর থেকে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছেন। জীবনের প্রতিটি খুঁটিনাটি ঘটনা সেই একজনের বিশাল বড় এক ঐশ্বরিক প্ল্যানের অংশবিশেষ। ভবিষ্যৎ হচ্ছে তাদের জন্য যারা এই ব্যাপারটিকে বিশ্বাস করে এবং এই প্ল্যানের একটি অংশ হিসেবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার মত সাহস রাখে। এই বিশাল বড় প্ল্যান বুঝতে পারার একমাত্র উপায় ‘মায়ান পঞ্জিকা’।

মায়ান পঞ্জিকার সত্যতা সম্পর্কে জানতে পারাটা মোটেই দুঃসাধ্য কোন ব্যাপার নয়। একটু চেষ্টা করলে এটা বোঝা যাবে ঠিকই কিন্তু সমস্যা বাধবে অন্য জায়গায় গিয়ে। সমস্যাটা হচ্ছে যে আমরা প্রত্যেকে বস্তুগত চিন্তা-চেতনায় অভ্যস্ত। সেজন্য আমরা আমাদের আশেপাশের সবকিছুর বস্তগত ব্যাখ্যা খুঁজি। কাজেই ঐশ্বরিক প্ল্যানের ক্ষেত্রেও আমরা এর বস্তুগত ব্যাখ্যা খোজার চেষ্টা করব এই শর্তে যে - যদি কোন প্রমাণ পাই তবে এটা বিশ্বাস করব, অন্যথায় নয়। একথা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না যে অনেকেই বিশেষ করে পশ্চিমাদের বিশ্বাস করতে অনেক কষ্ট হবে যে কোন প্ল্যানের অংশ হিসেবে তারা কারও দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।

২০১২ সালে ঘটতে চলা কাহিনীর ব্যাখ্যা
বর্তমানে মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং ধ্যান ধারণায় অনেক পরিবর্তন এসেছে।সময় এবং বিজ্ঞান সম্পর্কিত জ্ঞানের বিষয়ে মধ্য আমেরিকার মায়ান সভ্যতাই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল এবং আছে। সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে তাদের পঞ্জিকাই সবচেয়ে বেশি নিখুঁত। আজ পর্যন্ত কেউ এর কোন খুঁত খুঁজে পাননি। মায়ানদের সর্বমোট ২২ টি পঞ্জিকা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সময়ের সাথে সাথে সমগ্র পৃথিবী এবং সোলার সিস্টেমের যে পরিবর্তন আসবে বা এসেছে তার উল্লেখ আছে। এগুলোর মধ্যে কিছু পঞ্জিকা এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত হয়ে আসছে।
মায়ানদের হিসেব মোতাবেক পঞ্চম বিশ্বের সমাপ্তি হয়েছে ১৯৮৭ সালে। ষষ্ঠ বিশ্ব শুরু হবে ২০১২ সাল থেকে। অর্থাৎ বর্তমানে আমরা বিশ্বের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থান করছি। এই সময়টাকে বলা হয় এপোক্যালিপস অর্থাৎ রহস্যোদঘটন বা রহস্য উন্মোচন। এর অর্থ দাঁড়ায় প্রকৃত সত্য প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। আমাদের সঞ্চয় নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে এবং একইসাথে যৌথভাবে কাজ করার এটা একটি উপযোগী সময়ও বটে।


মায়ানদের ষষ্ঠ সভ্যতা যে আসলে কবে থেকে শুরু হতে যাচ্ছে তার কোন নির্ধারিত তারিখ নেই। এর মানে হচেছ ষষ্ঠ সভ্যতার শুরু হওয়া বা না হওয়াটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আমাদের উপর। আমরা যেমনটি আশা করি, তেমন একটি পৃথিবী এবং সভ্যতা যখন থেকে আমরা গড়া শুরু করবো. তখন থেকে এই বিশ্ব শুরু হয়ে যাবে।মায়ানরা এটাও বলে যে এটা শুরু হবে ২০১২ সাল নাগাদ।আমরা প্রযুক্তির অনেক উর্ধ্বে উঠে যাবো (এখন আমরা যেমনটা দেখতে পাচ্ছি)।আমরা সময় এবং টাকার উর্ধ্বে চলে যাবো।
চতুর্থ ডাইমেনশন (বর্তমান ৮ টি ডাইমেনশান নিয়ে কাজ চলছে) অতিক্রম করে আমরা পঞ্চম ডাইমেনশনে প্রবেশ করবো। গ্যলাক্সির সময় বিন্যাসের এবং আমাদের পৃথিবী ও সমগ্র সোলার সিস্টেমের সময় সীমা সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যাবে।
আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে আমাদের ডি এন এ এর আপগ্রেড হবে (অর্থাৎ ডি এন এ এর নতুন প্রোগ্রাম করা হবে।
“আমাদের গ্রহের প্রত্যেকে প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো এ ব্যাপারে একটু বেশিই সচেতন। কিন্তু সজ্ঞানে হোক আর অজ্ঞানে হোক প্রত্যেকেরই পরিবর্তন হচ্ছে।”- এক্সট্রাটেরেস্টিয়াল আর্থ মিশন।
২০১২ সালে আমাদের সৌরজগত এবং ছায়াপথ একই সমতলে বিন্যস্ত হবে। এই চক্রটি পূরণ হতে পুরোপুরি ২৬,০০০ বছর সময় লেগেছে। ভার্জিল আর্মস্ট্রং এর মতে আমাদের গ্যালাক্সির সাথে সাথে আরো দুটো গ্যালাক্সি ঐ সমতলে বিন্যস্ত হবে। অর্থাৎ খুব শীঘ্রই মহাজাগতিক কোন ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে।

সময় খুব দ্রুত চলে যাচ্ছে। হাজার হাজার বছর ধরে প্রতি সেকেন্ডে পৃথিবীর অনুরণনে ছিল ৭.৮৩ টি আবর্তন। কিছুদিন আগে পর্যন্ত ও এটা ছিল সবচেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য তথ্য। কিন্তু ১৯৮০ সালের পর থেকে এই অনুরণনের মাত্রা ধীরে ধীরে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে এই অনুরণনের মাত্রা প্রতি সেকেন্ডে ১২ টি আবর্তন। অর্থাৎ এখন ১ দিন সমান প্রায় ১৬ ঘন্টা হবে যেখানে আগে এটা ছিল ২৪ ঘন্টা। আরেকটি ব্যাখ্যা এমন হতে পারে যে, গত ১৬ বিলিয়ন বছরের তুলনায় আমাদের প্রযুক্তি এবং সচেতনতা এতটাই বেড়ে গেছে যে আমাদের প্রতি দিনের হিসেব থেকে কয়েক ঘন্টা কমে গেছে। এ কারণে মনে হচ্ছে যে সময় খুব দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। অন্যভাবে বলা যায় যে সময় কমে যাচ্ছে না বরং প্রতিনিয়ত সৃষ্টির হার বেড়ে যাচ্ছে।

এপোক্যালিপসের এ সময়টাতে অনেক মানুষের জীবনে ব্যক্তিগত বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে। এ পরিবর্তনের মাঝে বিচিত্রতা থাকবে। উদাহরণস্বরূপ-কোন বিশেষ সম্পর্কের সমাপ্তি, আবাসস্থলের পরিবর্তন, চাকরি বা কাজে পরিবর্তন, আচার-আচরণ এবং চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন ইত্যাদি।

প্রায় প্রতিটি মুহূর্তে আমরা ছোট-বড় অনেক ধরণের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এসব সিদ্ধান্তের কিছু ভালবাসার ভিত্তিতে, আবার কিছু ভয়ের ভিত্তিতে। কিন্তু এই সময়টাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভালবাসার ভিত্তিতে (ইনটুইশন ব্যবহার করে) বুদ্ধি বিবেচনার ভিত্তিতে নয়, নিজের আকাঙ্খাকে দমিয়ে রেখে ধৈর্য্য ধরতে হবে।

চিন্তা-চেতনার ধারা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকক্ষেত্রে এটা আমাদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যের সম্পর্কে খারাপ চিন্তা (নেগেটিভ থটস্) করলে আমরা আমাদের নিজেদের দিকে খারাপ ব্যাপার গুলোকে আকর্ষণ করি। একইভাবে ভাল চিন্তা (পজিটিভ থটস্) আমাদরে দিকে ভাল চিন্তা এবং ভাল ব্যাপারগুলোকে আকর্ষণ করে। কাজেই আমাদের প্রত্যেকেরই উচত নিজের চিন্তা-চেতনার ব্যাপারে সাবধান হওয়া। এতে করে বিভিন্ন রকম অপ্রত্যাশিত ঘটনার হাত থেকে আরা রেহাই পাব।

একটা ব্যাপার প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে অধিকাংশ মিডিয়া কোম্পানিগুলো কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আমাদের উচিত অন্তর্জ্ঞান দিয়ে তাদের উদ্দেশ্যগুলো উপলব্ধি করা। এই তথ্যগুলো কেন আমাকে জানানো হচ্ছে? যারা এগুলো আমাদের জানাচ্ছে তাদের জানানোর পিছনের মূল উদ্দেশ্য কি? এটা কি আসলে প্রবলেম রিয়েকশন সল্যুশন কেস? এ সমস্যা কি তারা এজন্য তৈরি করে যাতে আমরা রিয়াক্ট করি এবং হতবুদ্ধি হয়ে যাই? এবং এরপরে তারা আমাদের সল্যুশন অফার করবে এবং আমরা তা গ্রহণ করব। তাহলে কি এটাই তাদের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল?

আর এটাও স্মরণ রাখা উচিত যে অ্যাক্সিডেন্টের ফলে কখনো কোন ক্ষতি হয় না। কারণ প্রত্যেকটি ব্যাপার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কোন একজন দ্বারা। সত্যই কেবল মানুষকে মুক্ত করতে পারে ।

সূত্রঃ এখানে

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন